জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলা ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা যুদ্ধের রূপ ধারণ করতে চলেছে। দুই সপ্তাহ ধরে চলা হুমকি-ধমকির পর এবার বাস্তবিকই পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরসহ কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে দিয়েছে ভারত। জবাবে পাল্টা হামলা চালানো শুরু করেছে পাকিস্তানও।
এরই মধ্যে ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান। এমনটা দাবি করে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ধ্বংসপ্রাপ্ত যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে তিনটিই ভারতীয় বিমান বাহিনীর অহংকার রাফাল সিরিজের। অন্য দুটি সু–৩০ এবং মিগ–২৯। বিমান দুটি সোভিয়েত আমলে তৈরি। খবর রয়টার্সের। প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে গত মাসের শেষের দিকে ফ্রান্স থেকে প্রায় ৭৪০ কোটি ডলারের বিনিময়ে আরও ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করেছে ভারত। আগে থেকেই থাকা ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমানের সঙ্গে নতুন ২৬টি এলে দেশটির রাফাল যুদ্ধবিমানের বহর আরও শক্তিশালী হবে প্রত্যাশা করছিল ভারত ।
অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমানগুলো তৈরি করে ফরাসি মহাকাশ সংস্থা দাসোঁ এভিয়েশন। নিজেদের তৈরি বিমানবাহী রণতরী থেকে বিমানগুলো পরিচালিত করবে ভারত। এছাড়া রাশিয়ার মিগ-২৯ এর জায়গায় নতুন রাফাল যুদ্ধবিমানগুলো যুক্ত করা হবে বলেও জানানো হয়।পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাল্টা জবাব দিতে শুরু করেও পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমানকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে তারা।মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ দাবি করেন, ভারতের পাঁচটি বিমান, কয়েকটি ড্রোন ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর কিছু ফাঁড়ি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে ইতোমধ্যে।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। পরোক্ষভাবে পাকিস্তান এ হামলায় জড়িত, এমন অভিযোগ তুলে বুধবার দেশটির সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় দেশটি। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। স্থগিত করে দেওয়া হয় ভারতের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্যও।
এরপর থেকে দুদেশের পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকিতে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করে পরিস্থিতি, রীতিমতো যুদ্ধের রূপ ধারণ করেছে যা এখন। বুধবার (৭ মে) সকালে এক ব্রিফিংয়ে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেন, গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর কোটলি, ভাওয়ালপুর, মুরিদকে, বাগ ও মুজাফফরাবাদে ‘কাপুরুষোচিত’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। এ হামলায় দুই শিশুসহ অন্তত ৮ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়েছেন। ইতোমধ্যে এর বদলা নিতে শুরু করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।
একইদিন সকালে আরেক বিবৃতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তানি সেনাদের গোলাবর্ষণে তিনজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।এর আগে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে হামলার পর ভারত সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, ভারতের সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিন্দুর’ শুরু করেছে। এর আওতায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের ৯টি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। তবে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর কোনো স্থাপনাকে নিশানা বানানো হয়নি এ অভিযানে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন